অর্থনীতির পরিভাষায় সম্পদ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও ধারণার সমন্বয়ে গঠিত
সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি খুবই ভালো আছো। আজ তোমাদের নবম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের মানবিক বিভাগের অর্থনীতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো। অ্যাসাইনমেন্টের শিরোনাম হবে- অর্থনীতির পরিভাষায় সম্পদ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও ধারণার সমন্বয়ে গঠিত।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম মূল্যায়নের লক্ষ্যে প্রকাশিত নবম শ্রেণীর ১৪তম সপ্তাহে এসাইনমেন্ট যা ৩১শে আগস্ট ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট মাউশি অধিদপ্তর সাইটে প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।
নবম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের অর্থনীতি অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ :
অর্থনীতির পরিভাষায় সম্পদ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও ধারণার সমন্বয়ে গঠিত। -এ সম্পর্কে ২০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রতিবেদন লিখ।
সংকেত:–
- ১. সূচনা/ভূমিকা ;
- ২. সম্পদের ধারণার বর্ণনা ;
- ৩. বাস্তব উদাহারণসহ সম্পদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা ;
- ৪. উপসংহার ;
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি) :
ক. পাঠ্যপুস্তক, ইন্টারনেট, শিক্ষকের সহায়তায় সম্পদ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
খ. সম্পদের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
গ. সহপাঠী, শিক্ষক, অভিভাবকের কাছ থেকে জেনে সম্পদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলােচনার মাধ্যমে বুঝে নিতে হবে।
নবম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের মানবিক বিভাগের অর্থনীতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
সূচনা :
কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষ অর্থ উপার্জন করে এবং জীবনধারণের জন্য তা ব্যয় করে। যেমন- শ্রমিকরা কলকারখানায় কাজ করে কৃষকরা জমিতে কাজ করে, ডাক্তার রোগীদের চিকিৎসা করে, শিল্পপতিরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে এগুলো হলো অর্থনৈতিক কাজ। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রেরণা হলো দ্রব্যসামগ্রীর অভাব পূরণ করা নতুন দ্রব্য ও সেবা পণ্য সৃষ্টি করা।
সম্পদের ধারণা :
যে উৎস থেকে বারেবারে মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় তাকে সম্পদ বলা হয়। অন্যরূপে বলা যায় কোন বস্তু বা পদার্থ কোন কাজ সম্পন্ন করলে বা কোন বস্তু বা পদার্থের মধ্যে যে কার্যকারিতা শক্তি নিহিত আছে এবং যার ফলে মানুষের চাহিদা বারবার মেটানো সম্ভব হয় তাকে সম্পদ বলা হয়।
আমরা সবাই ‘সম্পদ’ শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত। আমাদের প্রতিদিনের আলোচনায় অনেকভাবে সম্পদ শব্দটি আসে । যেমন মি. সুজন অনেক সম্পদের মালিক। একজন অর্থনীতিবিদের কাছে সব জিনিস সম্পদ নয়। অর্থনীতিতে সম্পদ হলো সেই সমস্ত জিনিস বা দ্রব্য, যেগুলো পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হয়। সংক্ষেপে আমরা এ দ্রব্যগুলোকে অর্থনৈতিক দ্রব্যও বলে থাকি। যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, টিভি ইত্যাদি দৃশ্যমান বস্তুগত সম্পদ এবং ডাক্তারের সেবা, শিক্ষকের পাঠদান ইত্যাদি অদৃশ্যমান বা অবস্তুগত সম্পদ। উল্লিখিত জিনিসগুলো পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
বাস্তব উদাহারণসহ সম্পদের বৈশিষ্ট্য :
কোনো জিনিসকে যদি অর্থনীতিতে সম্পদ বলতে হয়, তবে তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। বৈশিষ্টগুলো হলো-
১। উপযোগ :
উপযোগ বলতে বোঝায় কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব মেটানোর ক্ষমতা। কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে সেই দ্রব্যের উপযোগ সৃষ্টির ক্ষমতা থাকতে হবে। উপযোগ নেই এমন দ্রব্য বা সেবা মানুষ অর্থ দিয়ে কেনে না।
২। অপ্রাচুর্যতা:
কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে তার পরিমাণ ও যোগান সীমিত থাকবে। যেমন নদীর পানি, বাতাস প্রভৃতির যোগান প্রচুর। এগুলো সম্পদ নয়। তবে শ্রম ব্যবহার করে পানিকে বোতলবন্দি করলে পানিসম্পদে পরিনত হয়। অন্যদিকে জমি, গ্যাস, যন্ত্রপাতি এগুলো চাইলেই প্রচুর পাওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ এগুলো আমাদের কাছে অপর্যাপ্ত দ্রব্য। এগুলোও সম্পদ।
৩। হস্তান্তরযোগ্য:
সম্পদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর হস্তান্তরযোগ্যতা। হস্তান্তরযোগ্য বলতে বোঝায় হাত বদল হওয়া। অর্থাৎ যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায়, তা-ই হলো সম্পদ । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভাকে অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ বলা যাবে না। কারণ তার প্রতিভাকে হস্তান্তর বা মালিকানা বদল করা সম্ভব নয়। আবার টিভির মালিকানা বদল করা যায় বলে টিভি সম্পদ ।
৪। বাহ্যিকতা :
যে সমস্ত দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বোঝায় তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়। কেননা এর কোনো বাহ্যিক অস্তিত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন কোনো ব্যক্তির কম্পিউটারের উপর বিশেষ অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান কিংবা কারো শারীরিক সৌন্দর্য বা চারিত্রিক গুণাবলিকে সম্পদ বলা যাবে না। তবে পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে নানাভাবে এগুলোকেও বিক্রয়যোগ্য সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।
সম্পদের শ্রেণিবিভাগ
উৎস বা উৎপত্তির দিক থেকে সম্পদ তিন প্রকার। যথা-
১। প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া যেসব দ্রব্য মানুষের প্রয়োজন মেটায়, তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে । যেমন- ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদ, নদ-নদী ইত্যাদি ।
২। মানবিক সম্পদ : মানুষের বিভিন্ন প্রকার যোগ্যতা ও দক্ষতাকে মানবিক সম্পদ বলা হয় । যেমন- শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগাঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি মানবিক সম্পদ ।
৩। উৎপাদিত সম্পদ : প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ সৃষ্টি হয় তাকে উৎপাদিত সম্পদ বলা হয়। যেমন- কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, যাতায়াত ও যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি মানুষ তৈরি করে বলে এগুলো উৎপাদিত সম্পদ।
উপসংহারঃ
কৃষিকাজ ছাড়াও এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক কাজগুলো হলো পোশাক শিল্পের কাজ, বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কাজ, বড় বড় শিল্প ও কল-কারখানার কাজ, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চাকরি, রাস্তাঘাট ও রেললাইন নির্মাণ, যানবাহন চালনা, ছোট-বড় ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি কাজ। এ ছাড়া খেলনা, পুতুল ও মিষ্টি তৈরি, দর্জি, কামার, স্বর্ণকার, চর্মকার, তাঁতি, কাঠুরিয়া, ফেরিওয়ালার কাজ করে এ দেশের অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অনেকে গ্রাম্য ডাক্তারি, কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক, বন্য প্রাণীর খেলা দেখানো ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত বিচিত্র ধরনের। অতি প্রাচীন কাল থেকে বিচিত্র এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এটিই তোমাদের নবম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের মানবিক বিভাগের অর্থনীতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান– অর্থনীতির পরিভাষায় সম্পদ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও ধারণার সমন্বয়ে গঠিত।
আরও দেখুন: