বাংলাদেশে জনসংখ্যার আধিক্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিশ্লেষণ
আজ আলোচনা করবো এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ভূগোল ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা নমুনা উত্তর/ সমাধান। উক্ত আর্টিকেল পর্যালোচনা শেষে এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ভূগোল ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবে এবং অ্যাসাইনমেন্টটি সুন্দরভাবে সমাধান করতে পারবে। অ্যাসাইনমেন্টের নির্ধারিত শিরোনাম- বাংলাদেশে জনসংখ্যার আধিক্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিশ্লেষণ। মূল উত্তর দেখার পূর্বে নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্ট ও তার ব্যাখ্যা দেখে নিই।
এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ভূগোল অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট : বাংলাদেশে জনসংখ্যার আধিক্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিশ্লেষণ।
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):
ক. ঘনত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বন্টন ও কারণ ব্যাখ্যা।
খ. বাংলাদেশে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির প্রভাব।
গ. প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনসংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক।
এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার্থীরা ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ভূগোল ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর
ক)বাংলাদেশের জনবসতি অঞ্চল চিহ্নিতকরনঃ
উপরের মানচিত্রে বাংলাদেশের তিনটি জনগোষ্ঠীর চিহ্নিত করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা,রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ। ঢাকায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করে ১৫০০ জনের অধিক। রাজশাহীতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করে ১৫০০ জনের মধ্যে।ময়মনসিংহে প্রায় রাজশাহীর মতো ঘটনা ১৫০০ জনের মধ্যে বাস করে।
খ) অঞ্চল ভিত্তিক জনসংখ্যা বন্টনের কারনঃ
জনসংখ্যার বণ্টনঃ
জনসংখ্যার বণ্টন হলো স্থানভেদে জনসংখ্যার বিন্যাস অর্থাৎ কোনো স্থানে জনসংখ্যা বসবাসের ধরণই জনসংখ্যা বণ্টন। জনসংখ্যা বণ্টন নির্ভর করে মূলত ভূ প্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতির উপর। (ক নং এর) মানচিত্রে প্রদর্শিত তিনটি জনবসতি অঞ্চলের (ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের ) জনসংখ্যা বন্টন এর পাঁচটি কারণ নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১। পরিবহন ও যোগাযোগঃ যেকোনো উন্নত দেশ বা উন্নত অঞ্চল কিংবা উন্নত শহরের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকে। যে অঞ্চলের পরিবহন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সে অঞ্চলের দিকে লোকজন বেশি আকৃষ্ট হয়। আর তাই সে অঞ্চলে অভিগমন করে। বিধায় সেই অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘরবসতি সৃষ্টি হয়। ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহন ব্যবস্থার কারণে এ সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি।
২। কর্মসংস্থানঃ কর্ম প্রত্যাশায় বহুলোক গ্রাম থেকে শহরে চলে যায়। বিশেষ করে ঢাকা ও রাজশাহীতে কর্ম প্রত্যাশায় বহুলোক গ্রাম অঞ্চল থেকে এসে ঘনবসতির সৃষ্টি করেছে। কারণে সমস্ত অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শিল্প-কারখানা ও বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে।
৩। জনসংখ্যা বন্টনের অন্যতম আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো শিক্ষা। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মানুষ শহরমুখী হয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ঢাকা শহরে প্রচুর পরিমাণে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ঢাকা শহরে এসে পাড়ি জমিয়েছে তাদের সন্তানাদির উচ্চ শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত করতে।
৪। শিল্পঃ জনসংখ্যা বন্টনের আরো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো শিল্প। শিল্পোন্নত এলাকাসমূহে স্বাভাবিকভাবে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়ে যায়। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ঢাকা শহরে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে । তাই ঢাকা শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।
৫। ব্যবসা বাণিজ্যঃ যে সমস্ত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা বেশি সে সমস্ত এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হয়।
গ) জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির প্রভাবঃ
১. খাদ্য সরবরাহ জনিত সমস্যা –
- জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না বলে খাদ্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়।
- অপুষ্টি জনিত কারণে শিশু মৃত্যু বৃদ্ধি পায়।
- মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
২. স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব –
- অনুন্নত দেশ গুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরো জটিল করে দেয়।
- অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি জনিত কারণে সৃষ্ট অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ মানুষের শারীরিক সমস্যাকে আরো বৃদ্ধি করে।
- মানুষের মধ্যে আরও দুরারোগ্য ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে।
৩. শিক্ষার উপর প্রভাব –
- অতি জনসংখ্যায় শিক্ষার সুযোগ কমে যায়।
- অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ গুলির এক বিরাট অংশ হল শিশু ও কিশোর, এদের শিক্ষার জন্য যে আর্থিক পরিকাঠামোর প্রয়োজন তা এসব দেশের পক্ষে গড়ে তোলা সম্ভব হয় না।
৪. জীবিকার উপর প্রভাব –
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানুষের জীবিকার উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে।
- এই বিপুল পরিমান জনগণ কে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ গুলির পক্ষে সম্ভব হয় না।
- দারিদ্রতা ও নানা ধরণের অপরাধ প্রবণতা বাড়ে।
৫. বাসস্থানের অভাব পরিলক্ষিত হয় –
- বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন হয় বাসস্থানের যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান সমস্যা ।
- আবার অনেক সময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে একান্নবর্তী পরিবার গুলি ভেঙে যায়।
- বাসস্থানের চাহিদা পূরনের জন্য কৃষিজমি হ্রাস পায় ও বনভূমি ধ্বংস হয়।
৬. পরিবেশ দূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি –
- অবৈজ্ঞানিক উপায়ে মাটি, জল, বাতাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরন ব্যবহার করে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
- কারখানা স্থাপন, রাসায়নিক সার ব্যবহার প্রভৃতি জল, মাটি, বাতাসকে দূষিত করছে ।
৭. অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যহত –
- অতিজনসংখ্যার চাপে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি মারাত্মক ভাবে ব্যহত হয়।
- অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য যে সব উপাদান অনুকূল তাও নষ্ট হচ্ছে।
ঘ) প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনসংখ্যার মধ্যে সম্পর্কঃ
প্রকৃতি থেকে পাওয়া সকল সম্পদ প্রাকৃতিক সম্পদ। অর্থাৎ মানুষ যে সমস্ত সম্পদ গুলো নিজেরা তৈরি করতে পারে না যেগুলো প্রকৃতির থেকে পাওয়া সে সমস্ত সম্পদ গুলো হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনসংখ্যার ঘনত্বের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান । বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। কিন্তু বাংলাদেশ হচ্ছে অতিরিক্ত জনসংখ্যার একটি দেশ। যার ফলে এর প্রাকৃতিক সম্পদ দিনদিন কমে যাচ্ছে।
১। কৃষি জমিঃ দিনদিন বাংলাদেশে আবাদ যোগ্য কৃষি জমি কমে যাচ্ছে ঘনবসতির কারণে। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বেড়েই চলছে কিন্তু কৃষি জমির পরিমাণ তো আর বাড়ছে না। তাই কৃষিজমির উপর তৈরি হচ্ছে বাসস্থান।
২। বনজ সম্পদঃ দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল কেটে আবাসস্থল তৈরি করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের বনজ সম্পদ গুলো বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।
৩। নদ-নদীঃ বাংলাদেশকে বলা হতো ১৩ শত নদীর দেশ। নদীমাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশের বহু নদী হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া একটি নদীর জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদী। অতিরিক্ত জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা মেটাতে শিল্প-কারখানা বেশি বেশি প্রস্তুত করা হয়েছে শিল্প-কারখানা ও ঘরবাড়ি নির্মাণের বর্জ্য আবর্জনা সব বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে নদী নদী টাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা নদীর মতো বহু নদী হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই দেশের বুকে থেকে।
৪। প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদঃ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, চিনামাটি, তামা, কঠিন, শিলা সিলিকা বালু, গন্ধক ইত্যাদি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ৷
বাংলাদেশে জনসংখ্যার আধিক্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশ যে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো আছে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ উত্তোলন করা খুবই ব্যয়বহুল; যেগুলো উত্তোলনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো উত্তোলন করার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এখনই উপযুক্ত সময় আমাদের দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা নতুবা দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করতে পারে নিকট ভবিষ্যতে।
অবশেষে আমরা বলতে পারি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনসংখ্যার মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যার আধিক্য বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এই ছিল তোমাদের এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ভূগোল ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা নমুনা উত্তর/ সমাধান– বাংলাদেশে জনসংখ্যার আধিক্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিশ্লেষণ।
আরো দেখুন-