একটি পতিত জলাশয় ও মাছ চাষের জন্য আদর্শ পুকুর পর্যবেক্ষণ করলে এদের মধ্যে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় ও পরিবেশের মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তার উপর চিত্রসহ একটি প্রতিবেদন
সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি খুবই ভালো আছো। আজ তোমাদের নবম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের কৃষি শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো। অ্যাসাইনমেন্টের শিরোনাম হবে- একটি পতিত জলাশয় ও মাছ চাষের জন্য আদর্শ পুকুর পর্যবেক্ষণ করলে এদের মধ্যে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় ও পরিবেশের মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তার উপর চিত্রসহ একটি প্রতিবেদন।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম মূল্যায়নের লক্ষ্যে প্রকাশিত নবম শ্রেণীর ১৪তম সপ্তাহে এসাইনমেন্ট যা ৩১শে আগস্ট ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট মাউশি অধিদপ্তর সাইটে প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।
নবম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের কৃষি শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ :
একটি পতিত জলাশয় ও মাছ চাষের জন্য আদর্শ পুকুর পর্যবেক্ষণ করলে এদের মধ্যে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় ও পরিবেশের মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তার উপর চিত্রসহ একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন কর।
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):
১.শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকের দ্বিতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিচ্ছেদের ধারণা নিবে।
২. সম্ভব হলে জলাশয় ও মাছ চাষের পুকুর পরিদর্শন করবে।
৩. মাছ চাষীর সাথে মতবিনিময় করবে।
৪. বিষয় শিক্ষকের সাথে আলােচনা করবে।
৫. নিজ হাতে অ্যাসাইনমেন্ট লিখবে।
পানিতে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যমান সকল জীব তথা উদ্ভিদ প্রাণি মাছের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রধান উৎস । পুকুৱে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণির পর্যাপ্ততা উক্ত পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতাকে নির্দেশ করে । পুকুরে বসবাসকারী এসব জীব সম্প্রদায়কে প্রধানত নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়-
১। প্লাঙ্কটন:
প্লাঙ্কটন হলো পানিতে বিদ্যামান আণুবীক্ষনিক জীব । এরা মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য । প্লাঙ্কটন দুই প্রকার যথা-উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন (ফাইটোপ্লাঙ্কটন) এবং প্রানি প্লাঙ্কটন (জুওপ্লাঙ্কটন)। উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন হলো মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রধান উৎস। এগুলো সবুজ বর্ণের ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ । যেমন-স্পাইরোগাইরা, নাভিকুলা, এনাবেনা ইত্যাদি । অপর দিকে পানিতে বিদ্যমান ক্ষুদ্র জলজ প্রাণি ও লার্ভা হলো জুওপ্লাঙ্কটন। ফাইটোপ্লাঙ্কটন এর পাশাপাশি ফ্লু প্লাঙ্কটনের আধিক্য পানির রংকে বাদামী, সবুজ বা হলদেটে সবুজ করে তোলে। ডেফনিয়া, সাইক্লোপস, ফিলিনিয়া ইত্যাদি জুওপ্লাঙ্কটনের উদাহরণ।
২। নেকটন:
জলজ প্রাণি যারা কিছুটা বড় আকারের পানিতে মুক্তভাবে সাঁতার কাটতে সক্ষম এবং পানিতে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে তাদেরকে নেকটন বলে। যেমন- জলজ পোকা মাকড় এবং ওয়াটার ত্রিটল।
৩। বেনথোস:
এরা পুকুরের তলদেশে কাদার উপরিভাগে অথবা মধ্যখানে বসবাস জীব। যেমন শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি ।
৪। নিউসটন:
পানির উপরিভাগে ঝুলে থেকে অথবা ভাসমান অবস্থায় সাঁতার রত বা বিশ্রামরত জীবকে নিউসটনে বলে । যেমন- প্রোটোজোয়া, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি।
৫। পেরিফাইটন:
যে সকল ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রানি শিকড়যুক্ত এবং অপেক্ষাকৃত বড় উদ্ভিদের শাখা প্রশাখায় লেগে থাকে অথবা পানির তলদেশে শক্ত কোনো আশ্রয়ে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করে জীবন যাপন করে তাদেরকে পেরিফাইটন বলে।
৬। জলজ উদ্ভিদ:
পুকুরে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এরা প্রধানত দুই ধরনের। যথা-
- ক. শেওলা জাতীয় নিম্নতর উদ্ভিদ এবং
- খ. ফলধারী উচ্চতর উদ্ভিদ।
ক. শেওলা জাতীয় নিম্নতর উদ্ভিদ : দেহ গঠনের ওপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়:
- ১। প্লাঙ্কটন জাতীয় শেওলা এ জাতীয় শেওলা অধিকাংশ খালি চোখে দেখা যায় না। এরা পানির সাথে একস্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। যেমন- পেভোরিনা
- ২। তন্ত্রজাতীয় শেওলা এ ধরনের শেওলা তন্ত্র বা সূতার মত অনেক লম্বা হয় এবং পানির ঠিক নিচেই এরা অবস্থান করে । বদ্ধ পানিতে এরা বেশি পরিমানে জন্মে এবং এদের রং ঘন সবুজ। যেমন- স্পাইরোগাইরা।
- ৩। নিমজ্জিত শেওলা এরা অনেকটা দেখতে উন্নত উদ্ভিদের মত এরা পানির নিচে মাটিতে লেগে থাকে এবং দেহ উপরের দিকে উঠে সূর্যালোক পানির যে অঞ্চলে পড়ে সে অঞ্চলে এৱা জন্মায় । যেমন- চারা।
খ. ফুলধারী উচ্চতর উদ্ভিদ: জীবন বৃত্তান্তের ওপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- ১। ভাসমান উদ্ভিদ- এসকল উদ্ভিদ পানির উপরে ভেসে থাকে এবং দল বেঁধে জন্ম । এদের মূল মাটিতে আটকানো থাকে না। যেমন- কচুরিপানা, ক্ষুদিপালা, কুটি পানা ইত্যাদি।
- ২। নির্গমনশীল উদ্ভিদ- এ সকল উদ্ভিদের মূল বা শিকড় পানির নিচে কাদার সাথে সংযুক্ত থাকে। এদের কান্ড, পাতা এবং ফুল পানির উপরিভাগে ভাসতে থাকে। যেমন- শাপলা, বিষকাটালী, পানিফল ইত্যাদি ।
- ৩। লতানো উদ্ভিদ- এরা মূল বা শিকড় দ্বারা জলাশয়ের পাড়ে বা কম পানিতে লেগে থাকে। এদের দেহ লতার মত থাকে এবং কান্ড, পাতা পানিতে ছড়িয়ে থাকে। যেমন- কলমিলতা, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ ইত্যাদি
- ৪। ডুবস্ত উদ্ভিদ- এ ধরনের জলজ উদ্ভিদ পানির তলদেশে ডুবস্ত অবস্থায় থাকে। এদের শিকড় মাটিতে থাকে। এদের পাতা বা কান্ড বা ডাল কখনো পানির উপরে আসে না। যেমন- পাতাঝাঝি, কাঁটাঝাঝি, পাতা শেওলা ইত্যাদি ।
জীবসম্প্রদায়ের মধ্যে বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ন হয়। নিচে এর সাথে পরিবেশের পার্থক্য ছক দেওয়া হলোঃ
এই ছিল তোমাদের নবম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের কৃষি শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান– একটি পতিত জলাশয় ও মাছ চাষের জন্য আদর্শ পুকুর পর্যবেক্ষণ করলে এদের মধ্যে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় ও পরিবেশের মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তার উপর চিত্রসহ একটি প্রতিবেদন।
আরও দেখুন: