উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু বিভিন্ন ধরনের ফসলি জমি খন্ডে খন্ডে ভাগ করে গনি মিয়া দুই মৌসুমে পর পর দুই বছর। বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় অনুযায়ী (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণয়নকৃত অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যসূচির আলােকে নির্ধারিত গ্রিড অনুযায়ী ১৪তম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছে মাউশি অধিদপ্তর। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করবো অষ্টম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের কৃষি শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান– উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু বিভিন্ন ধরনের ফসলি জমি খন্ডে খন্ডে ভাগ করে গনি মিয়া দুই মৌসুমে পর পর দুই বছর। বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন।
অষ্টম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের কৃষি শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ:
উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু বিভিন্ন ধরনের ফসলি জমি খন্ডে খন্ডে ভাগ করে গনি মিয়া দুই মৌসুমে পর পর দুই বছর। বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন।
১। নিম্নলিখিত ফসলগুলাে দিয়ে গনি মিয়া কোন ধরনের শস্য পর্যায় অবলম্বন করবেন। তা চার্টের সাহায্যে তুমি উপস্থাপন কর- পাট, আউশ, গােল আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আখ, মাষ কলাই, মুগ, সরিষা ও গম।।
২। শস্য পর্যায় কী?
৩। উপরিক্ত ফসল নির্বাচনের ক্ষেত্রে শস্য পর্যায় বিষয়গুলাে কিভাবে গুরুত্ব পায়?
৪। ভূমি উন্নয়নে শস্য পর্যায় কিভাবে ভূমিকা রাখে।
৫। শস্য পর্যায়ের সুফল পেতে হলে গণি মিয়ার শস্য পর্যায়ের ব্যবহার কতটুকু যুক্তি সংগত? ব্যাখ্যা কর।
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):
১. এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত ২০২৪ সালের কৃষি শিক্ষা বিষয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ।
২. ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ।
৩. বিষয় শিক্ষকের পরামর্শ গ্রহণ।
৪. অভিভাবকের মতামত গ্রহণ।
৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিকট প্রতিবেশির সাথে পরামর্শ।
অষ্টম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের কৃষি শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
১। নিম্নলিখিত ফসলগুলো দিয়ে গনি মিয়া যে ধরনের শস্য পর্যায় অবলম্বন করবেন তা চার্টের সাহায্যে তা উপস্থাপন করা হলোঃ
গনি মিয়ার উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু বিভিন্ন ধরনের ফসলি জমি রয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, গনি মিয়া পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার এবং দিনাজপুরের উত্তর-পশ্চিম অংশের কৃষি পরিবেশ-১ এর অন্তর্ভুক্ত। এখানকার কৃষকরা পাট, আউশ, গোলআলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আখ, মাষকলাই, মগ, সরিষা ও গম চাষ করেন। কৃষকেরা বৃষ্টিপাত নির্ভর ফসল ফলান, আবার সেচনির্ভর ফলও ফলান ।
গনি মিয়া রবি, খরিপ-১ এবং খরিপ-২ মৌসুমভিত্তিক পাট, আউশ, গোলআলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আখ, মাষকলাই, মুগ, সরিষা ও গম ইত্যাদি ফসল ফলাবেন। এগুলো ফলানোর জন্য কৃষক বছরভিত্তিক নিম্নোক্ত শস্যপর্যায় গ্রহণ করতে পারেন :
১ম বছরঃ
খণ্ড-১
রবি : আউশ ।
খরিপ-১ : পাট
খরিপ-২ঃপতিত
খন্ড-২
রবি : সরিষা, ফুলকপি,
খরিপ-১ : মুগ
খরিপ-২ : আখ
খণ্ড-৩
রবি : গোল আলু, বাঁধাকপি
খরিপ-১ : মাষকলাই
খরিপ-২ গম
২য় বছরঃ
খণ্ড-১
রবি : গোল আলু, বাঁধাকপি
খরিপ-১ : মাষকলাই
খরিপ-২ : গম
খণ্ড-২
রবি : সরিষা, ফুলকপি,
খরিপ-১ : মুগ
খরিপ-২ : আখ
খণ্ড-৩
রবি : আউশ
খরিপ-১ : পাট
খরিপ-২ : পতিত
শস্য পর্যায়ক্রমে দেখা যায় যে, প্রথম বছরে যেভাবে ফসল উৎপাদন শুরু হয়েছিল, দ্বিতীয় বছরে আবার সেভাবেই শেষ হচ্ছে
২. শস্য পর্যায়ঃ
শস্য পর্যায়ের ধারণা
শস্য পর্যায় একটি উন্নত কৃষি প্রযুক্তি। এর দ্বারা মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ফসল ভালো হয়, অধিক ফলন হয়। রোগ-পোকা কম হয় এবং সারের কার্যকারিতা ভালো হয়। প্রযুক্তি হিসেবে শস্য পর্যায়ের ব্যবহার সব দেশেই প্রচলিত। মাটির উর্বরতা বজায় রেখে এক খণ্ড জমিতে শস্য ঋতুর বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ফসল উৎপাদন করার নাম শস্য পর্যায়। অর্থাৎ একই জাতের ফসল একই জমিতে বার বার উৎপাদন না করে অন্য জাতের ফসল উৎপাদন করাই হচ্ছে শস্য পর্যায়। যেমন- গভীরমূলী ফসল উৎপাদনের পর অগভীরমূলী জাতীয় ফসলের আবাদ করা উচিত। ফলে পোকা-মাকড় ও রোগ-পোকার উপদ্রব কম হয়।
কৃষক শস্য পর্যায় প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য তার সমগ্র জমিকে তিন বা চার খণ্ডে ভাগ করেন। প্রথম বছর খণ্ডগুলোতে রবি, খরিপ-১, খরিপ-২ মৌসুম অনুযায়ী বিভিন্ন ফসল ফলানো হয়। প্রথম বছর শেষ হলে দ্বিতীয় বছরে প্রথম খন্ডের ফসল দ্বিতীয় খণ্ডে, দ্বিতীয় খণ্ডের ফসল তৃতীয় খণ্ডে- এভাবে শেষ খণ্ডের ফসল প্রথম খণ্ডে চাষ করা হয়। দ্বিতীয় বছরের পরে তৃতীয় বছরে একইভাবে বিভিন্ন ফসলের খণ্ড পরিবর্তন হয়। তৃতীয় বছরে শস্যের আবর্তন শেষ হয় এবং প্রত্যেক ফসলই প্রতি খণ্ডে একবার করে চাষ করা হয়।
৩. উপরিউক্ত ফসলগুলোর ক্ষেত্রে শস্য পর্যায়ের বিষয়গুলোর গুরত্বঃ
শস্য পর্যায়ের জন্য এমন ফসল নির্বাচন করা হবে হয়েছে নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়-
- ১। পর পর একই ফসলের চাষ না করা;
- ২। একই শিকড় বিশিষ্ট ফসলের চাষ না করা;
- ৩। ফসলের পুষ্টি চাহিদার কম-বেশি অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করা;
- ৪। ফসলের তালিকায় ডাল ফসল অন্তর্ভুক্ত করা;
- ৫। সবুজ সার যেমন ধৈঞ্চা চাষ করা;
- ৬। গবাদি পশুর খাবারের জন্য ঘাসের চাষ করা:
- ৭। খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসলের চাষ করা।
৪. ভূমি উন্নয়নে শস্য পর্যায়ের গুরত্বঃ
- শস্য পর্যায়ের প্রযুক্তি ব্যবহারে মাটির উর্বরতা সংরক্ষিত হয়;
- মাটির পুষ্টির সমতা বজায় থাকে;
- আগাছার উপদ্রব কম হয়;
- রোগ ও পোকার উপদ্রব কম হয়;
- পানির অপচয় কম হয়;
- ফসলের ফলন বাড়ে;
৫. শস্য পর্যায়ের সুফল পেতে হলে গণি মিয়ার শস্য পর্যায়ের যুক্তিকতাঃ
আমাদের দেশের কৃষকরা জেনে অথবা না জেনে শস্যপর্যায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছেন। বৈজ্ঞানিক যুক্তি হয়তো তারা দিতে পারবেন না। কিন্তু এতটুকু জ্ঞান তাদের আছে যে, একই ফসল একই জমিতে বছরের পর বছর চাষ করলে ফলন কমে যায়। মাটির উর্বরতা কমে যায়। পোকামাকড় ও রোগবালাইসহ নানা সমস্যা দেখা দেয় । কৃষকেরা তাদের জমিতে ফসল ফলান সেগুলোকে রবি, খরিপ-১, খরিপ-২ এই তিন ভাগে ভাগ করেছেন।
শস্য পর্যায় এর বিধি অনুযায়ী কৃষকের জমিকে খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করার প্রয়োজন পড়ে। আর খণ্ডগুলোর আকার সমান রাখার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের কৃষকদের জমি বিভিন্ন খন্ডে ভাগ করে ভাগ হয়ে আছে যা আকারে সমান নাও হতে পারে। কৃষকদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই তারা জমি ও ফসল নির্বাচন করেন।
উপরোক্ত আলোচনা ও পূর্ববর্তী প্রশ্নের আলোকে বলা যায়, শস্য পর্যায় এর সুফল পেতে হলে গণি মিয়ার শস্য পর্যায় এর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে যুক্তিসঙ্গত।
এই ছিল তোমাদের অষ্টম শ্রেণি ১৪তম সপ্তাহের কৃষি শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান– উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু বিভিন্ন ধরনের ফসলি জমি খন্ডে খন্ডে ভাগ করে গনি মিয়া দুই মৌসুমে পর পর দুই বছর। বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন।
আরো দেখুন: