স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দাও।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দাও।
বাংলদেশ স্বাধীন লাভ করার পর চিত্রটি ছিল খুবই কষ্ট্রের ৷ চারিদিকে ছিল কান্না, জন হারানোর বেদনা, রাস্তাঘাট
থেকে শুরু করে নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের বেহাল অবস্থা ছিল। সেই সাথে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ছিল অর্থশূন্য। সেই
সময় মানুষের যৌলিক চাহিদাগুলো পুরণ করাই ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধাবিধস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে
পূর্ণগঠনের দায়িত্ব শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া লো তুলে ধরা হল:
ক) সংবিধান প্রণয়ন ও কার্ধকর : স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অস্থায়ীভাবে
সংবিধান প্রনয়ন করেন। সংবিধানকে চূড়ান্ত রুপ দান করার জন্য গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে একটি “খসড়া
সংবিধান প্রণয়ন’ কমিতি গঠন করা হয়। যা ১৯৭২ সালের ১২ই অক্টোবর বিল আকারে গণপরিষদে পেশ করা হয়
এবং যা পরবর্তীতে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়।
এই সংবিধানটি ওই সময়ের জন্য একটি মাইলফলক ছিল কারন সংবিধানের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকারের
সাথে সার্বজনীন ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার শ্বীকৃত হয়।
খ) গণপরিষদ আইনঃ বাংলাদেশের গনতন্ত্রের অগ্রষাত্রায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল “গণপরিষদ আইন” যা ১৯৭২,
সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আদেশ জারি করেন। এই আদেশের মুল লক্ষ্য ছিল দেশের প্রয়োজনীয় আইন পাস করা
ও তা দ্রুত কার্ধকর করা।
গ) অবকাঠামো উন্নয়নঃ স্বাধীনতার পর যুদ্ধাবিধবস্ত বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে উঠে দাঁড়ানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে সোচ্চার হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি অবাঙালিরা দেশ ত্যাগ
করলে তাদের মালিকানাধীন কল-কারখানাগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এনে বাংলাদেশের সম্পদ হিসেবে পরিণত
করেন এবং কারখানাগুলোকে জাতীয়করণ করেন। শিক্ষার অগ্রগতি সাধন এর জন্য বঙ্গবন্ধু সেই সময়ে প্রায় ৩৮
হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। বিজ্ঞানী ডঃ কুদরাত-এ-খুদা কে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন
গঠন করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে সেই কমিটির মাধ্যমে গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন।
ঘ) অর্থনৈতিক উন্নয়নে উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহনঃ ঘে ধবংসঘজ্ঞের পর বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্বভার
গ্রহণ করেছিলেন, তা পালন করা সহজ ছিল না। এই কঠিন কাজটি সফল করার জন্য বঙ্গবন্ধু উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি
হাতে নেন। যেমনঃ
১। দেড় কোটি শরণার্থী আরো প্রায় এক কোটি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষকে খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।
২। প্রতিটি পরিবারকে কম করে হলেও একটা টিনের শেড, প্রতি মাসে আধা মণ থেকে দেড় মণ পর্যন্ত খাদ্য
সরবরাহ।
৩। চাষাবাদের নানা উপকরণ, ক্যাশ টাকা, সিআই সিড, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্য সরবরাহ করা।
৪। খাদ্য উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ভর্তৃকি প্রদান।
& | ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা।
৬। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উন্নয়নের অন্তরায়। তাই দেশের ১২ থানায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পাইলটিং শুরু
করেছিলেন তিনি।
এ। উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন।
৮। পাটশিন্, শিপইয়ার্ড ও ডিজেল প্লান্ট ইত্যাদির পুনর্গঠন ও পুনর্নির্যাণ এর জন্য কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রপাতি
জোগানের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেন ৫৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
৯। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে দেশের
বৃহত্তম বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
১০। নারী পুনর্বাসন সংস্থা গঠন।
১১। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র না হয়েও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্য তত্কালীন মহাসচিব কুর্ট ওয়েলদেইমের কাছে
মানবিক সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
১২। ১৯৭২ সালের ২৭ নভেম্বর ওয়েলদেইমের কাছে পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি বাংলাদেশের নিরপরাধ
মানুষকে পুনর্বাসনে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছিলেন।