বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে যা করতে হবে Buy Gold Near Me
বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে যা করতে হবে। ধরুন আপনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফিরছেন, সঙ্গে পরিবারের জন্য এনেছেন কিছু স্বর্ণালংকার। কিন্তু বিমানবন্দরে আপনি এই স্বর্ণালংকারের জন্যই পরতে পারেন বিরাট ঝামেলায়। কারণ কতটুকু স্বর্ণ বহন করা বৈধ, আর কতটুকু বহন করা অবৈধ, এই তথ্য আপনার জানা না থাকলে, বিপদ শুধু নয়, কারাভোগের মতো বড় বিপদেও পড়তে পারেন আপনি।
বিদেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে পণ্য বা লাগেজ পরিবহনে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যে কোনো শুল্ক বা কর দিতে হয় না। তবে বাড়তি পণ্য বা অলংকারের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে শুল্ক এবং কর পরিশোধ করতে হয়।
Buy Gold Near Me
বিশেষ করে স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রে বেশকিছু নীতিমালা রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। এসব বিষয় না জানার কারণে অনেকে না বুঝেই বিমানবন্দরে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। বৈধভাবে যতটুকু স্বর্ণ একজন যাত্রী আনতে পারেন তার চেয়ে বেশি স্বর্ণ আনলে প্রাথমিকভাবে জরিমানা থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে কারাদণ্ডও হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১২ তে এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই ২০১২ থেকে এ বিধিমালা কার্যকর করা হয়।
একজন যাত্রি কী পরিমাণ স্বর্ণের অলংকার আনতে পারবেন?
এই বিধিমালার আওতায় বিমানবন্দরে শুল্ক ও কর ধার্য করা হয়। বিধামালার ৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘একজন যাত্রী অনধিক ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার অথবা ২০০ গ্রাম রৌপ্যের অলংকার (এক প্রকার অলংকার ১২টির অধিক হবে না) সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে আমদানি করা যাবে। অর্থাৎ বিদেশ থেকে আগমনকালে একজন যাত্রী শুল্ক-কর ব্যতীত সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম স্বর্ণ সাথে আনতে পারবেন। তবে এক প্রকারের অলংকার ১২টির বেশি হতে পারবে না। ১০০ গ্রামের অতিরিক্ত আরও ১০০ গ্রাম পর্যন্ত অলংকার HS-Code (২০১৪-১৫) অনুযায়ী গ্রাম প্রতি ১৫০০ টাকা হারে শুল্ক-কর পরিশোধ সাপেক্ষে আনা যাবে।
সঙ্গে স্বর্ণালংকার থাকলে করণীয়
কোনো যাত্রীর কাছে ১০০ গ্রামের অতিরিক্ত পরিমাণ অলংকার থাকলে বিমানে সরবরাহকৃত ‘ব্যাগেজ ঘোষণা ফরম’ এ সংশ্লিষ্ট কলামে অবশ্যই ‘হাঁ’-তে টিক দিতে হবে। যদি কোনো যাত্রী তা না করেন তবে কাস্টম চেকিংয়ের সময় অবশ্যই নিজ থেকে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানাতে হবে।
স্বর্ণবার/স্বর্ণপিণ্ড আনার ক্ষেত্রে
বিদেশ থেকে আগমনকালে একজন যাত্রী স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড বহন করার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিধিমালার ১০ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে আগমনকালে অনধিত ২০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড অথবা ২০০ গ্রাম ওজনের রৌপ্যবার বা রৌপ্যপিণ্ড সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করতে হবে।’ অর্থ্যাৎ, শুল্ক-কর পরিশোধ সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড সাথে আনা যাবে। প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রামে ৩ হাজার টাকা শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। বিধিমালায় বলা আছে, যাত্রীর সাথে স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড থাকলে সেটা অবশ্যই যাত্রীকে ঘোষণা করতে হবে। তথ্য গোপন করলে কিংবা স্বর্ণবার বা পিণ্ডের মোট পরিমাণ ২০০ গ্রামের বেশি হলে উপরে বর্ণিত একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তবে এই ক্ষেত্রে সাধারণত ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত ডিএম নিয়মের সুযোগ দেওয়া হয়। এর অতিরিক্ত হলে স্মাগলিং এর দায়ে মামলা হতে পারে।
এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্যে দুই ধরনের স্বর্ণবার পাওয়া যায়- ১০০ ও ১১৭ গ্রাম প্রতিটি। একাধিক (দুটি) স্বর্ণবার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার কিনলে যাত্রীরা ঝামেলামুক্তভাবে তা বহন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণবার বা পিণ্ডের হিসাব সম্পূর্ণরূপে আলাদা। যেমন, একজন যাত্রী চাইলে ১০০ গ্রাম শুল্কমুক্ত অলংকার এবং ২০০ গ্রাম শুল্কযুক্ত বার বা পিণ্ডসহ মোট ৩০০ গ্রাম স্বর্ণ বৈধভাবে আনতে পারেন। এ ছাড়া বিধিমালার ৭ নং ধারায় গ্রিন চ্যানেল ও রেড চ্যানেল ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে কোনো যাত্রী শুল্ক ও কর আরোপযোগ্য পণ্য বহন না করলে তিনি বিমান বন্দরের গ্রিন চ্যানেল (যদি থাকে) ব্যবহার করতে পারবেন।
এতে আরো বলা আছে, গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ যাত্রীর ব্যাগেজ দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে শুল্ক কর্মকর্তা কর্তৃক স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করা যাবে। তবে কোনো শুল্ক কর্মকর্তা যুক্তিসংগত সন্দেহের বশে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী যে কোনো যাত্রীর ব্যাগেজ স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করতে পারবেন।
অতিরিক্ত স্বর্ণ বহন করার শাস্তি
যদি কোনো যাত্রী তা না জানান, তবে গোপন করার দায়ে কিংবা ঘোষণা দিয়ে ১০০+১০০=২০০ গ্রামের অতিরিক্ত পরিমাণ অলংকার আনার অপরাধে সম্পূর্ণ স্বর্ণালংকারই জব্দ করে অভিযুক্ত যাত্রীকে ডিএম (ডিটেনশন মেমো) দেওয়া হবে। এই ডিএম নিয়ে ২১ দিনের মধ্যে কাস্টম হাউজে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে নির্ধারিত ট্রাইবুনালে যেতে হবে এবং শুনানি শেষে ট্রাইবুনাল কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক-কর/জরিমানা দিয়ে তা ছাড়িয়ে আনতে হবে। HS-Code-এ শুল্ক-কর প্রতি অর্থবছরে পুনর্নির্ধারিত হয়ে থাকে।