রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াস ব্যতীত নাগরিক জীবনের কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আলোকে এ বিষয়ে তোমার মতামত যুক্তিসহ তুলে ধরো।
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সবাই ভালো আছো। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে- রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াসে নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধান সম্ভব (রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াস ব্যতীত নাগরিক জীবনের কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আলোকে এ বিষয়ে তোমার মতামত যুক্তিসহ তুলে ধরো) এ বিষয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন।
এসএসসি দাখিল পৌরনীতি অ্যাসাইনমেন্ট ২০২৪
অ্যাসাইনমেন্টঃ রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াস ব্যতীত নাগরিক জীবনের কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আলোকে এ বিষয়ে তোমার মতামত যুক্তিসহ তুলে ধরো।
নির্দেশনা-
- ১. দুর্যোগ মোকাবেলা/নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রের করণীয় ব্যাখ্যা করবে।
- ২. সমস্যা সমাধানে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরবে।
- ৩. করোনা কালে রাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ উল্লেখ করবে।
- ৪. চলমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও নাগরিকের ভূমিকা যথাযথ কিনা যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করবে।
- ৫. এ বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রদান করবে।
আরও দেখুন: আলিম পরীক্ষা ২০২২ দ্বাদশ শ্রেণি ৪র্থ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট হিসাব বিজ্ঞান ১ম পত্র উত্তর
এসএসসি দাখিল পৌরনীতি অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর
পৌরনীতির ইংরেজি শব্দ সিভিক্স (Civics)। সিভিক্স শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ সিভিস (Civis) এবং সিভিটাস (Civitas) থেকে এসেছে। সিভিস (Civis) শব্দের অর্থ নাগরিক (Citizen) আর সিভিটাস শব্দের অর্থ নগর-রাষ্ট্র (City State)।
পৌরনীতি ও নাগরিকতা :
প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ও নগররাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ওই সময় গ্রিসে ছোট ছোট অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে নগর-রাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করতো, তাদের নাগরিক বলা হতো। শুধু পুরুষশ্রেণি রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেত বিধায় তাদের নাগরিক বলা হতো।
বর্তমানে নাগরিকের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি নগর-রাষ্ট্রের স্থলে বৃহৎ আকারের জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।
নাগরিক অধিকার ভোগের পাশাপাশি আমরা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে, তারা ভোটদান কিংবা নির্বাচিত হওয়ার মতো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে না। তাছাড়া বিদেশিদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ নেই। যেমন- নির্বাচনে ভোট দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের মর্যাদা কে নাগরিকতা বলে।
দুর্যোগ মোকাবেলা/নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রের করণীয়ঃ
নাগরিক অধিকার একরকমের অধিকারের শ্রেণী যা সরকার, সামাজিক সংগঠন, ও বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারা লঙ্ঘনের থেকে একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করে। একজন যাতে বৈষম্য বা নিপীড়ন ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রের বেসামরিক ও রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করে।
নাগরিক অধিকার অন্তর্ভুক্ত করে জনগণের শারীরিক ও মানসিক সততা, জীবন, ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; জাতি, লিঙ্গ, জাতীয় মূল, রঙ, বয়স, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, জাতিভুক্তি, ধর্ম, বা অক্ষমতার মতো ভিত্তিতে বৈষম্য থেকে সুরক্ষা এবং একক অধিকার যেমন গোপনীয়তা এবং চিন্তার স্বাধীনতা, বাকশক্তি, ধর্ম, প্রেস, সমাবেশ, এবং আন্দোলনের স্বাধীনতা থেকে সুরক্ষা।
একটি দেশের যেকোনো নাগরিক সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিকদের এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। কেননা রাষ্ট্র হয়তো কিছু নীতিমালা জারি করতে পারে। কিন্তু নাগরিকরা যদি তা অমান্য করে তাহলে সে সমস্যার সমাধান হবে না। নাগরিক যদি রাষ্ট্রের নীতিমালাগুলো মেনে চলে রাষ্ট্রকে সাহায্য করে, তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। একইভাবে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাষ্ট্রের নাগরিকদের একসাথে এর মোকাবেলা করা অত্যাবশ্যক।
নাগরিকদের যেকোনো সমস্যা মহামারী/দুর্যোগে সরকারকে পূর্ব প্রস্তুতি এবং পরবর্তী অবস্থার ব্যাপারে আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। কোভিড-১৯ এর কারণে সারা বিশ্বে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। করোনা এখন বৈশ্বিক সমস্যা।
করোনার বিস্তার রোধে রাষ্ট্রের কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত যেমন-
১. মহামারী দুর্যোগ সমস্যাটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট সচেতন ও সতর্ক করা এবং এর মোকাবেলায় রাষ্ট্রের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া।
২. নাগরিকদের যেকোনো সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের পাশে থাকা।
৩. ত্রাণ অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক সাহায্য ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের কাছে পৌছানো নিশ্চিত করা।
৪. জনসাধারণের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজ করা, যাতে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানসিক, অর্থনৈতিক ও ভৌত কল্যাণ সাধনসহ তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকায় স্বাভাবিক জীবন, জীবিকা ও কর্ম পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।
সমস্যা সমাধানে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
যে কোন মহামারী বা দুর্যোগে সরকার ও রাষ্ট্রের যেরকম কিছু করণীয় রয়েছে, তেমনি সুনাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যেমন-
- ১. প্রথমত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাষ্ট্রের যে কোনো দুর্যোগ/সমস্যা বা মহামারীতে নাগরিকের দায়িত্ব হলো নিজে আতঙ্কিত না হওয়া এবং অন্যদের আতঙ্কিত না করা। পাশাপাশি নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যকে সচেতন করা।
- ২. রাষ্ট্রকর্তৃক বিধিনিষেধ মেনে চলা এবং অন্যকে মেনে চলতে উৎসাহী করা।
- ৩. সমস্যার মোকাবিলায় রাষ্ট্র কর্তৃক পদক্ষেপ গুলো সম্পাদনে যথাসাধ্য সহায়তা করা।
- ৪. মহামারীতে আক্রান্ত হলে যথাযথভাবে চিকিৎসা নেওয়া।
- ৫. পরিষ্কার পরিছন্নতা, নিজের ও পরিবারের যত্ন নেওয়া, সঠিক নিয়মে সরকারি সাহায্য নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া।
- ৬. এই রকম পরিস্থিতিতে গুজবে কান না দেওয়া এবং গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা। একমাত্র সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সংবাদে বিশ্বাস রাখা।
করোনাকালে রাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ:
১. লকডাউন পলিসি:
বাংলাদেশে যখন করোনায় আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে ঠিক তার পরপরই সরকার পুরো দেশের লোকজন পলিসি চালু করেছে। অর্থাৎ জনসাধারণ প্রয়োজন ছাড়া ঘরবাড়ি থেকে বের না হওয়া এবং অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন কাঁচাবাজার, খাবার ঔষধের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরী যেসব সেবা আছে তা বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ জারি করেছে। ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছে।
২. বাহিরের কার্যক্রম কমিয়ে আনা:
এ সময়ে যদি কোন অফিস-আদালতে প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম করতে হয় তাহলে তা অনলাইনে সম্পাদন করা। সরকার কর্তৃক জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং গণপরিবহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।
৩. আবাসস্থল এর ব্যবস্থা:
ভাসানচরে এক লাখ লোকের আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। এ সময় যদি দরিদ্র কোন ব্যক্তি ভাসানচরে যেতে চান তাহলে তারা যেতে পারবেন। জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
৪. আর্থিক সহায়তা:
করোনা ভাইরাস জনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় অন্নসংস্থানের অসুবিধা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সহায়তা প্রদান করা ইত্যাদি
৫. স্বাস্থ্য সেবা:
করোনা ভাইরাসের (covid-19) শনাক্তের পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত করতে পরীক্ষাকেন্দ্র বৃদ্ধির কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশের ৬৮ টি স্থানে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় ১০ হাজার ৫০ টিসহ সারাদেশে ১৪ হাজার ৫৬৫ টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর জন্য অ্যালকোহল, করোনা টেস্ট কিট, টেস্ট ইনস্ট্রুমেন্ট, জীবানুনাশক, মাস্ক প্রটেক্টিভ গিয়ারসহ মোট ১৭ ধরনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছে রাজস্ব বোর্ড এনবিআর।
চলমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও নাগরিক এর ভূমিকা:
যদিও করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবুও আমার মতে এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও নাগরিক এর ভূমিকা যথার্থ নয়। নিচে আমার মতামতের ভিত্তিতে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দেওয়া হল-
১. সব বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরেই স্ক্রিনিং করা হচ্ছে বলে সরকারের দাবি। তবে বাস্তবে তার প্রমাণ মেলে না। কারণ বিদেশ থেকে আসা কেউ কেউ স্ক্রিনিং ছাড়াই দেশে ঢুকে যাচ্ছেন। এলাকায় গিয়ে ঘুরছেন। স্থানীয় লোকজন আবার সেই কথা জেনে পুলিশে খবর দিচ্ছে। আর শুধুমাত্র শাহজালাল বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এর জন্য থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও তা এখন নষ্ট (সূত্র: ডয়চে ভেল পত্রিকা-৩ মার্চ, ২০২৪)
২. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গণবিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে আসা কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে যারা আসছেন, তারা কোয়ারেন্টাইন এর শর্ত সঠিকভাবে মানছেন না। অনেকেই মিথ্যা ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। অধিদপ্তর তাদের সবাইকে আইন অনুযায়ী এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮- এর শর্ত পালন করার অনুরোধ করেছে।
৩. চিকিৎসা মন্ত্রণালয়ের বিশাল গাফিলতির প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। বহুসংখ্যক রোগী হওয়ার কারণে অনেক হসপিটালে নতুন রোগীদের ভর্তি করাচ্ছেন না। আবার কিছু কিছু হসপিটাল রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা চেয়ে বসছে।
করোনার মত মহামারীতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নাগরিকদের সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত। কেননা করোনার বিষয়টি শুধু রাষ্ট্রের নয়; নাগরিকদের অবহেলার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ বহুসংখ্যক করোনার ভ্যাকসিন আমদানি করেছে, তবুও বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এই করোনার জন্য সতর্ক থাকা উচিত। অন্যথায়, বাংলাদেশের সব দিক থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
এটিই ছিল তোমাদের কাঙ্খিত উত্তর- রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াসে নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধান সম্ভব।
আরও দেখুন: