ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সময় পরিক্রমা অনুযায়ী উল্লেখযােগ্য ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ একটি পােস্টার পেপার তৈরি করাে।
২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণকারীর সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা। তোমাদের জন্য দ্বিতীয় সপ্তাহে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র থেকে ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সময় পরিক্রমা অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ সহ পোস্টার তৈরি করতে দেয়া হয়েছে। আজকে তোমাদের জন্যও ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট এর একটি বাছাই করার নমুনা উত্তর প্রদান করা হবে। আশা করছি এটি অনুসরণ করার মাধ্যমে তোমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারবে এবং সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করতে পারবে।
এখানে আমরা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের দেওয়া ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট নির্দেশনা অনুযায়ী চারটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করার চেষ্টা করব।
এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় অ্যাসাইনমেন্ট
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত হোম মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের দ্বিতীয় পত্র থেকে দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে পাঠ্য বইয়ের প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা থেকে।
২০২৪ সালের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী দ্বিতীয় সপ্তাহের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু ও সুলতান বিজয়ের কারণ ও ফলাফল বিশ্লেষণ করতে, সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য এবং ফলাফল মূল্যায়ন করতে পারবে, মইজুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরি ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সংশ্লিষ্ঠ ঘটনাবলীর বর্ণনা করতে পারবে।
নিচের ছবিতে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো–
অ্যাসাইনমেন্টঃ ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সময় পরিক্রমা অনুযায়ী উল্লেখযােগ্য ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ একটি পােস্টার পেপার তৈরি করাে।
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি): (অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সময় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের এই প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে হবে)
ক) মুহাম্মদ বিন কাসিমের অভিযানের কারণ বর্ণনা;
খ) সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ও ফলাফল বিশ্লেষণ;
গ) মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরীর অভিযান পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ;
ঘ) উল্লেখযােগ্য ঘটনাবলি সম্বলিত পােস্টার তৈরিকরণ;
এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর
উপরের এসাইনমেন্ট পেপার এ উল্লেখিত ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মানবিক বিভাগের নৈর্বাচনিক বিষয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের একটি নমুনা উত্তর প্রদান করা হলো।
এখানে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নির্দেশনা, মূল্যায়ন রুবিক্স সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা এর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সঠিকভাবে অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর লিখতে পারে।
ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সময় পরিক্রমা অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ সহ পোস্টার
শিক্ষার্থীদের জন্য ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সময় পরিক্রমা অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী এর বিবরণ উল্লেখ করে একটি পোস্টার তৈরি করে দেয়া হলো। নিচে ক্রমান্বয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর দেয়া হল।
প্রশ্ন- ক: মুহাম্মদ বিন কাসিমের অভিযানের কারণ বর্ণনা;
ক এর উত্তর
মুহাম্মদ বিন কাসেমের অভিযানের কারণঃ তৎকালীন ভারতের সিন্ধু ও মুলতানের রাজা ছিলেন দাহির। আরব সাজ্যের খলিফা ছিলেন প্রথম ওয়ালিদ। আরব সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ ইরাক প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন হাজ্জাজুকইউসুফ। সিন্ধু ও মুলতানের সাথে আরব শাসনের সাধারণ সীমান্ত ছিল। নানা কারণে হাজ্জাজ বিন ইউসুফু সাজা দাহিরের মধ্যে মতপার্থক্য হয়।
এ কারণে হাজ্জাজ ভারতের সিন্ধু জয় করার জন্য তাঁর জামাতা ও ভ্রাতুপুত্র ইমাদউদ্দিন মুহম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে এক বিজয় অভিযান প্রেরণ করেন।
পরােক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণসমূহ: সিন্ধু বিজয়ের পরােক্ষ কারণসমূহের মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণ এবং প্রত্যক্ষ কারণের মধ্যে ছিল জলদস্যুদের দ্বারা আরব বণিকদের জাহাজ লুণ্ঠন।
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণঃ ভারত ধন-ঐশ্বর্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। আরবদের সিন্ধু অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ধনরত্ন লাভ করা। রাজা দাহিরের রাজ্য ও আরব সাম্রাজ্যের মধ্যে সীমান্ত অভিন্ন হওয়ায় দুই জ্যৈর মধ্যে প্রায়ই মতানৈক্য ও মতবিরােধ সৃষ্টি হতাে এবং সীমান্ত সংঘর্ষ লেগেই থাকত।
হাজ্জাজ ছিলেন কঠুের প্রকৃতির শাসক। আইনের শাসন এড়িয়ে হাজ্জাজের অঞ্চল থেকে অনেক অপরাধী রাজা দাহিরের রাজ্যে আশ্রয় করছিল। এ সকল কারণে রাজনৈতিক তিক্ততা উত্তরােত্তর বাড়ছে থাকে। এই সময় সিন্ধুতে চলছিল রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। দাহিছিলেন অত্যাচারী শাসক। নিম্নশ্রেণির লােকেরা ছিল অত্যাচারিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কোন রাজনৈতিক অধিকার ছিল না।
সুতরাং এ সুযােগ কাজে লাগিয়ে হাজ্জাজ সিন্ধু জয় করে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটাতে চেয়েছিলেন। ভারতে ইসলাম প্রচার করাও হাজ্জাজের একটি উদ্দেশ্য ছিল।
প্রশ্ন-খ: সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য ও ফলাফল বিশ্লেষণ;
খ এর উত্তর
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্যঃ
রাজনৈতিক কারণঃ সুলতান মাহমুদের পিতা সবুক্তগীনের সময় থেকে গজনির সাথে পাণ্ডাবের হিন্দুশাহী বংশের বিরােধ চলছিল। পাশ্লাবের হিন্দুশাহী রাজ্যের রাজা জয়পাল সবুক্তগীনের শক্র হওয়ায় সুলতান মাহমুদ জয়পালের সাথে শত্রুতা উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছিলেন। ভারতের অনেক রাজা জয়পালের সাথে মাহমুদ বিরােধী জোটে যােগদান করেন। সুতরাং মাহমুদকে তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করতে হয়।
আবার ভারতের কোন কোন রাজা মাহমুদের সাথে বন্ধুত্ব সূত্রে আবদ্ধ হয়। এতে তাঁদের প্রতিবেশী রাজন্যবর্গ তাঁদের প্রতি বৈরী আচরণ শুরু করেন। মিত্রবন্নেস্বার্থ সংরক্ষণের জন্যও মাহমুদকে ভারতে অভিযান করতে হয়। পরাজিত রাজারা মাহমুদের সাথে সন্ধি করেন আঁমধ্যে কেউ কেউ সুযােগ পেয়ে সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করেন।
বিদ্রোহী রাজাদের সন্ধির শর্ত পালনে বাধ্য করার জন্য তাকে অভিযান করতে হয়।
অর্থনৈতিক কারণঃ সুলতান মাহমুদ রাজধানী গজনিকে তিলােত্তেমা নীপরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন জ্ঞানী-গুণীর পৃষ্ঠপােষক। তাঁর ছিল একটি অত্যন্ত শক্তিশালী দৈন্যবাহিনী।
তিনি দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তােলেন। এসবের জন্য তাঁর প্রচুর অর্থের প্রয়ােজন ছিল। গজনীর রায় কষাগার তাঁর চাহিদার যােগান দিতে পারছিল না। তাই তিনি বাইরে থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেন। তাত ছিল সম্পদশালী দেশ। এখানকার বিভিন্ন রাজ্যের কোষাগার ধনরত্নে পূর্ণ ছিল।
ধর্মপ্রাণ বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ অকাতরে মন্দিরগুলােতে দান করতাে। মন্দিরকে নিরাপদ বিবেচনা করে অনেক সময় রাজারাও তাতে ধনরত্ন সংরক্ষণ করতেন। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই সুলতান মাহমুদের নজর ভারতের উপর পড়ে। এজন্য তিনি প্রায় প্রতি বছর ভারতে অভিযান প্রেরণ করেন এবং ভারত থেকে প্রচুর ধন-রত্ন নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যান।
প্রফেসর হাবিব, প্রফেসর নাজিম ও হেইন্স প্রমুখ আধুনিক ঐতিহাসিকগণ সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক কারণকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই বলে মাহমুদকে লুণ্ঠনকারী বা অর্থলােলুপ তস্কর বলা যাবে না। কারণ ভারত থেকে সংগৃহীত অর্থ তিনি মানব কল্যাণে ব্যয় করেন। নিজের ভােগ-বিলাসের জন্য তিনি সে অর্থ ব্যবহার করেন নি।
সামরিক উদ্দেশ্যঃ সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি সামরিক উদ্দেশ্য ছিল। তাঁর রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও সিন্ধু দখল করা অত্যন্ত প্রয়ােজন ছিল।
এ সকল অঞ্চল ছিল সামরিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ সমরবিদ হিসেবে তাঁতীরােহী ও পদাতিক বাহিনী ছিল সুশৃংঙ্খল ও সমরনিপুণ। তিনি বুঝতে পারেন এ সকল অঞ্চল জয় করতে তাঁকে খুব একটা বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে না। সুতরাং তিনি বার বার ভারত আক্রমণ করে তাঁর সামরিক উদ্দেশ্য হাসি করেছিলেন।
ধর্মীয় উদ্দেশ্যঃ সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের প্রতি কোন কোন ঐতিহাসিক ধর্মীয় উদ্দেশ্যও কার্যকর ছিল বলে মনে করেন। তাঁদের মতে তিনি ভারতে ইসলাম রে অভিলাষী ছিলেন। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই মত সমর্থন করেন না।
তাঁরা মনে করেন মাহমুদের যুগে শাসকগণ ইসলাম প্রচার করা তেমন কর্তব্য বলে মনে করতেন না। তিনি ভারত অভিযানে এসে কোন বিধর্মীকে বলপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেন নি। এছাড়া মাহমুদ হিন্দু মন্দির দখল করেছেন ধর্ম বিদ্বেষের কারণে নয়, বরং অর্থ পাওয়ার আশায়।
এ সকল মন্দির ছিল যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত সম্পদে পূর্ণ। সর্বোপরি তাঁর সেনাবাহিনীতে হিন্দু সৈন্যের উপস্থিতি তার ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যকে অনুমােদন করে না।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের ফলাফলঃ
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের প্রভাব সমগ্র উত্তর-পশ্চিম ভারতে অনুভূত হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই অভিযানের প্রভাব ছিল ব্যাপক। সুলতান মাহমুদ অভিযান করেছেন, জয়লাভ করেছেন এবং ধন-সম্পদ নিয়ে নিজের রাজ্য গজনিতে ফিরে গিয়েছেন।
শুধু পাঞ্জাবের কিয়দংশ এবং মুলতান ছাড়া ভারতের অকৈান অঞ্চল তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন নি এবং কোন স্থায়ী সাম্রাজ্যও প্রতিষ্ঠা করেন নি। কয়েকজন রাজ-অবশ্য তাঁকে কর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে এই সকল রাজা কর প্রদান করেন।
পাঞ্জাব ও মুলতান ছাড়া উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের রাজাগণ তাঁদের স্ব স্ব রাজ্যে নিজেদের প্রভূতপুর্নরায় স্থাপন করেন। এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, সুলতান মাহমুদের জরত অভিযান সফল হয় নি।
তবে এ কথাও সত্য যে, সুলতান মাহমুদের বিজয় স্থায়ী না হলেও তাঁর বিজয়ই রঙ্গকালে মুসলমানদের ভারত বিজয়ের পথ সুগম করেছিল। সুলতান মাহমুদের বার বার আক্রমণ উত্তর ভারতের রাজন্যবর্গের সামরিক শক্তি দুর্বল করে দিয়েছিল।
সামরিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন বলে পরবর্তী মুসলমান আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভবপর হয় নি। সুলতান মাহমুদের অভিযানের সময় ভারতীয় সামরিক শক্তি ও রণকৌশল মুসলমানদের সামরিক শক্তি ও রণকৌশলের তুলনায় যে কত দুর্বল তা প্রকটভাবে ধরা পড়ে।
মাহমুদ ভারতের সমৃদ্ধ জনপদ, নগর, দুর্গ ও মন্দির আক্রমণ করেন ধন-রত্ন লাভ করার জন্য। এই জন্য এ সকল লক্ষ্যস্থল থেকে তিনি প্রচুর সম্পদ নিজ রাজধানী গজনিতে নিয়ে যান। এর ফলে ভারত অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে।
অপরদিকে গজনি অর্জন করে আর্থিক সমৃদ্ধি। ভারতের আর্থিক দুর্বলতা তার সামরিক শক্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপরও বিরূপ প্রভঞ্জলে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের ফলাফল ছিল লক্ষ্যনীয়।
সুলতান মাহমুদের ভারভিযানের ফলাফল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও লক্ষ্যনীয়। সুলতান মাহমুদ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ডব্লিউ হেগ মন্তব্য করে “তিনিই প্রথম ভারতের মধ্যস্থলে ইসলামের পতাকা উডডীন করেন। সুলতান মাহমুদের সৈন্যবাহিনীর সাথে অনৈক সুফি-দরবেশ ও পণ্ডিত ব্যক্তি ভারতে আসেন।
সুফি-দরবেশগণ ভারতে ইসলাম প্রচারে সহায়তা করেন্থদের সান্নিধ্যে এসে বহু ভারতীয় ইসলাম গ্রহণ করে। পন্ডিত ব্যক্তিগণ ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে ইসলামি চিন্তা শুনার সমন্বয় সাধন করেন। উদাহরণ স্বরূপ বিখ্যাত পন্ডিত আল-বিরুনী দশ বছর ভারতে অবস্থান করেন।
তিনি ভারতীয় পন্ডিতদের নিকট ভারতের দর্শন, সমাজ ব্যবস্থা ও কৃষি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। এর ফল স্বরূপ তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিতাব-উল-হিন্দ’ প্রণয়ন করেন। গ্রন্থটি ভারত ইতিহাসের অমূল্য উপকরণ। মাহমুদের অভিযানের ফলে ইসলামি সভ্যতা ও ভারতীয় সভ্যতার মধ্যে ভাব বিনিময় ঘটে।
প্রশ্ন-গ: মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরীর অভিযান পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ;
গ এর উত্তর
ভারতের রাজনৈতিক অবস্থাঃ আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও কনৌজ মৌর্য বংশের শাসনামল থেকেই আফগানিস্তান ছিল ভারতের একটি অংশ মুসলিম ঐতিহাসিকগণ এটিকে হিন্দুশাহী রাজ্য বলে অভিহিত করেন। সপ্তম শতাব্দিতে কর্কট রাজবংশীয় দুর্লভ বর্ধলেজধীনে কাশ্মীর ছিল উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য।
বিজেতা, বিদ্যোৎসাহী ললিতাদিত্য মুক্তাপীড়ছিলেন কাশ্মীরের রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর। তিনি কনৌজ, কামরূপ, কলিঙ্গ ও গুজরাট জয় করেন বলে জাঙ্গ ধায় কর্কট বংশের অপর একজন শাসক জয়পীড় গৌড় ও কনৌজের নৃপতিদের পরাজিত করেন।
অষ্টম শতাব্দির প্রথম দিকে কনৌজ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হত। উত্তর-ভারতের অন্যতম পরাক্রমশালী রাজা যশােবর্মণ কনৌজের হৃত গৌরব ও আধিপত্য পুনরুদ্ধার করেন। তিনি গৌড় জয় এর রাজাকে হত্যা করেন এবং কাশ্মীর রাজ ললিতাদিত্যের সহায়তায় তিব্বত অভিযান করেন।
তিনি চীনে দূত প্রেরণ করেন। কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্য কর্তৃক তিনি পরাজিত ও নিহত হন। যশােবর্মণ, সিন্ধুরাজ দাহিরের সমসাময়িক ছিলেন। অত:পর অষ্টম শতকের প্রথম দিকে কনৌজে গুরজর-প্রতিহার রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
সিন্ধু ও মালব-দিল্লি ও আজমীরঃ সপ্তম শতকে সিন্ধু ছিল হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যভূক্ত। পরবর্তীতে চ র্মিক সিন্ধুর জনৈক ব্রাহ্মণ মন্ত্রী সিন্ধুতে স্বাধীন রাজবংশের গােড়াপত্তন করেন। চাচের পুত্র রাজা দাহিরকেজিত করে ইমাদউদ্দীন মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ সালে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে এ রাজ্য দীর্ঘস্থায় নি। প্রতিহার রাজপুতদের দ্বারা শাসিত মালব ছিল উত্তরভারতের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। উজ্জয়িনী ছিলজ্যৈর রাজধানী দ্বাদশ শতকে মুসলিম অভিযানের প্রাক্কালে দিল্লি ও আজমীরে শক্তিশালী চৌহান বংশীয় রাজধূগর্ণরাজত্ব করত। এ বংশের শাসক বিশালদেব চৌহান প্রতিহর বংশের নিকট।
গুজরাট, আসাম ও নেপালঃ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে গুজরাট ছিল গুরজর প্রতীহার বংশের অধীনে। অত:পর তাদের আধিপত্য ক্ষুন্ন করে চালকও ভাগেলা বংশ পর্যায়ক্রমে গুজরাট শাসন করে। নবম শতাব্দিতে চালে বংশ বুন্দেলখন্ডে এক স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। শেষ রাজা গন্ড ১০১৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদের নিকট পরাজিত হন। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তসীমায় অবস্থিত একটি রাজ্য হল আসাম।
এটি হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়। এ সময় রাজা শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার স্বাধীন নৃপতি। হর্ষবর্ধনের সমস্যময়িক এই শাসকের মৃত্যুর পর বাংলায়মৗরাত্মক গােলযােগ ও বিশৃংঙ্খলা দেখদেয়। নেপাল সপ্তম শতাব্দিতে উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য। মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সাথে নেপালের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।
প্রশ্ন-ঘ: উল্লেখযােগ্য ঘটনাবলি সম্বলিত পােস্টার তৈরিকরণ;
গ এর উত্তর
ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সময় পরিক্রমা অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ সহ পোস্টার তৈরি করে দেওয়া হল। এটি অনুসরণ করে তোমাদের বাসায় থাকা ক্যালেন্ডার এ ছবিগুলো সংযুক্ত করে পোস্টার তৈরি করে নাও।